ক্যাট্যারিং ব্যবসায় নতুন উদ্যোক্তাদের সুবর্ণ সুযোগ



মুহাম্মদ নূরে আলম: ক্যাট্যারিং ব্যবসায় নতুন উদ্যোক্তাদের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ক্যাটারিং বা খাদ্য সরবরাহ ব্যবসার নয়া দিগন্ত রাজধানী ঢাকায়। তরুণ উদ্যোক্তারা এই ব্যবসায় দ্রুত সফল হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উপলক্ষটা যখন বিয়ে, তখন ভোজের বিষয়টিই আসবে আগে। খাবারের আইটেম যা-ই হোক, রান্না চাই টেন অন টেন। তাই তো সবার আগে খোঁজ পড়ে বাবুর্চির। সময়ের সঙ্গে বদলেছে বিয়ের প্রস্তুতি। বাড়ির পাশে প্যান্ডেল টানিয়ে রান্না-খাওয়ার ছবি আর মেলে না। কমিউনিটি সেন্টার আর কনভেনশন সেন্টারেই সারা হয় সব আয়োজন। এদের নির্দিষ্ট বাবুর্চি থাকলেও পছন্দের বাবুর্চির রান্না চান অনেকেই। কেউ আবার রান্না আর পরিবেশনের পুরো বিষয়টি ক্যাটারিংকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চান। প্যাকেজ খাবার ঠিক করা হয় জনপ্রতি প্লেট হিসেবে। প্যাকেজের সাধারণ মেন্যু হবে সাদা পোলাও, চিকেন রোস্ট, খাসির রেজালা বা মোরগ রেজালা, হোয়াইট ভেজিটেবল বা চায়নিজ ভেজিটেবল, আলু বোখারা চাটনি, কাবাব (জালি, শামি, টিক্কা) জর্দা বা ফিরনি, বোরহানি, পিস স্যালাড। জনপ্রতি এই প্যাকেজের মূল্য হবে ক্যাটারিং-ভেদে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। অতিথি সংখ্যা এবং বাজার দরের ওপর মূল্য কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। কেউ কাচ্চির মেন্যু চাইলে প্যাকেজ হবে কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন রোস্ট বা গ্রিল, আলু বোখারা চাটনি, কাবাব (জালি, শামি, টিক্কা) শাহি টুকরা, জর্দা বা ফিরনি, বোরহানি। প্রতি প্লেট মূল্য ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাচ্চির জন্য কালিজিরা চাল বা বাসমতি চাল, দেশি বা ব্রয়লার মুরগির ওপর দাম কম-বেশি হতে পারে। খাবারের প্যাকেজে ১০০ জনের অর্ডার করলে ক্যাটারিং পাঁচজন অতিরিক্ত ধরে খাবার তৈরি করে। তাই খাবারে কম পড়ার ঝুঁকি কম থাকে। তবু শতভাগ নিশ্চিত হতে নির্ধারিত অতিথির চেয়ে কিছু বেশি অর্ডার করাই শ্রেয়।

ক্যাটারিং বা খাদ্য সরবরাহ ব্যবসায় রান্না ও বণ্টনের জন্য জায়গার প্রয়োজন হয়। সাধারণত অফিস-আদালতের কাছাকাছি বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেসব স্থানে হয় (কমিউনিটি সেন্টার, হল, ক্লাব) তার আশেপাশে রান্নার জন্য ২ থেকে ১ কক্ষবিশিষ্ট একটা বাসা ভাড়া নিলে ভালো হয়। পুঁজি না থাকলে নিজের বাড়িতে রান্না করেই তা সরবরাহ করা সম্ভব। ক্যাটারিং ব্যবসা বলতে মূলত খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে বুঝায়। খাদ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন অফিস, আদালতে চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ করে। এ ব্যবসার মাধ্যমে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। কারণ বাড়িতে বসেই এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। ক্যাটারিং ব্যবসা বলতে মূলত খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে বুঝায়। খাদ্য সরবরাহকারী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ করে। এ ব্যবসার মাধ্যমে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। কারণ বাড়িতে বসেই এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। তবে শহরাঞ্চলেই বিশেষ করে থানা, জেলা বা বিভাগীয় শহরে এই ব্যবসার সম্ভাবনা বেশি।

স্থান নির্বাচন: ক্যাটারিং বা খাদ্য সরবরাহ ব্যবসায় রান্না ও বণ্টনের জন্য জায়গার প্রয়োজন হয়। সাধারণত অফিস-আদালতের কাছাকাছি বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান যে সব স্থানে হয় (কমিউনিটি সেন্টার, হল, ক্লাব) তার আশেপাশে রান্নার জন্য ২/১ কক্ষবিশিষ্ট একটা বাসা ভাড়া নিলে ভালো হয়। পুঁজি না থাকলে নিজের বাড়িতে রান্না করেই তা সরবরাহ করা সম্ভব।

বাজার সম্ভাবনা: এলাকার উপর ক্যাটারিং ব্যবসার বাজার নির্ভর করে। থানা বা জেলা শহরে একটা ক্যাটারিং ব্যবসা সাধারণত প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জনকে খাবার সরবরাহ করতে পারবে এবং বড় জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ জনকে খাবার সরবরাহ করা সম্ভব। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করেও আয় করা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন ফাস্টফুড এর দোকান ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেক, বিস্কুট, সিঙ্গারা, রোল, সমুচা ইত্যাদি সরবরাহ করে আয় বাড়ানো সম্ভব। প্রয়োজনীয় মূলধন ক্যাটারিং ব্যবসা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী উপকরণ কিনতে প্রায় ২৭২০-৩১৭০ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতিদিন ১৫০ জনকে খাবার সরবরাহ করতে চাইলে বাজার খরচের জন্য ৩৮৬৮-৪০২৫ টাকার প্রয়োজন হবে। দোকানঘর, বিদ্যুৎ ভাড়া ইত্যাদির জন্য আলাদা টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়-স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) -এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
আয় ও লাভের হিসাব: মোট খরচের ক্ষেত্র আনুমানিক মূল্য (টাকা)। ১৫০ প্যাকেট খাবারের জন্য প্রতিদিন বাজার খরচ-৩৮৬৮-৪০২৫ টাকা। স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ-১০-১৫ টাকা। ২ জনের মজুরি (১ দিনের) ১০০-১২০ টাকা। পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খরচ-১৫০-১৬০ টাকা। যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ-১৫০-১৮০ টাকা। মোট খরচ-৪২৭৮-৪৫০০ টাকা। আয় ও লাভ: প্রতি প্যাকেট খাবার ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রয় করলে ১৫০ প্যাকেট বিক্রয় করে আয় ৬০০০-৬৭৫০ টাকা।  ১৫০ প্যাকেট খাবার তৈরি খরচ ৪২৭৮-৪৫০০ টাকা। লাভ ১৭২২-২২৫০ টাকা। বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর ব্যবসার লাভ-ক্ষতি ও আয় নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠা-নামা করে। তাই এই ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য।
প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান: হাড়ি/পাতিল-৫টি ৫০০-৫৫০ তৈজসপত্রের দোকান। কড়াই ২টি ৩০০-৩৫০ তৈজসপত্রের দোকান। গামলা ২টি ১০০-১২০ তৈজসপত্রের দোকান। চামচ ৩টি ১৫০-১৮০ তৈজসপত্রের দোকান। ঢাকনা ৩টি ১৫০-১৬০ তৈজসপত্রের দোকান। বালতি ২টি ১২০-১৩০ তৈজসপত্রের দোকান। বটি ২টি ২০০-২২০ হার্ডওয়ারের দোকান। ছুরি ২টি ১০০-১২০ হার্ডওয়ারের দোকান। চুলা ২টি ১০০-১২০ হার্ডওয়ারের দোকান বাক্স ১০০টি ৮০০-১০০০ তৈজসপত্রের দোকান। ঝুড়ি ২টি ২০০-২২০ তৈজসপত্রের দোকান। মোট-২৭২০-৩১৭০ টাকা। কাঁচামাল (প্রতিদিন ১৫০ প্যাকেট খাবার তৈরির জন্য)। উপকরণ পরিমাণ আনুমানিক, মূল্য (টাকা) প্রাপ্তিস্থান। চাল ১০ কেজি ৩৩০-৩৫০ টাকা মুদি দোকান। ডাল ২০ কেজি ২২৮-২৩০ মুদি দোকান। তেল ২ কেজি ৫০০ গ্রাম ২০০-২১০ মুদি দোকান।  মশলা পরিমাণ মতো ১৫০-১৬০ মুদি দোকান। মুরগী ১৫টি ২২০০-২২৫০ কাঁচা বাজার। ডিম ৫০টি ২৬০-২৬৫ মুদি দোকান। সবজি ১০ কেজি ১৫০-২০০ শাক-সবজির বাজার। মাছ ২ কেজি ৩৫০-৩৬০ মাছের বাজার। মোট-৩৮৬৮-৪০২৫ টাকা।
ব্যবসা পরিচালনার নিয়ম: ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসায়ীকে স্থানীয় অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। যদি খাবারের মান ভালো হয় এবং সঠিক দাম রাখা হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের খাবারের অর্ডার পাওয়া সহজে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার সরবরাহ করতে হবে। কখনও খারাপ ও বাসী খাদ্য সরবরাহ করা উচিত নয়। টাটকা মাছ, মাংস, সবজি রান্না করতে হবে। ভালো মানের মসলা ব্যবহার করতে হবে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ভালো রান্না করতে হবে। দোকানে যারা খাবার অর্ডার করতে আসবে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। ভালো ব্যবহার পেলে অর্ডারকারী তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই জায়গায় খাবার অর্ডার করবে।
খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে সব পাত্রে রান্না করা হবে সেই পাত্রগুলো ভালো করে পরিস্কার করে নিতে হবে। মাছ, মাংস, চাল ডাল, সবজি রান্নার আগে ভালোভাবে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে সবসময় ফুটানো পানি সরবরাহ করতে হবে। রান্নার জায়গা ও তার আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। রান্নার জিনিসপত্র যেমন গামলা, বড় হাড়ি, পাতিল কয়টা করে আছে তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখলে ভালো হয়। এছাড়া কতটি প্লেট, গ্লাস, জগ, বাটি ইত্যাদি খাবার পরিবেশনের দ্রব্যাদি আছে তার একটি তালিকা তৈরি করা থাকলে ক্রেতাদের চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রব্যাদি ভাড়া দেয়ায় সুবিধা হবে এবং পরে হিসাব মিলিয়ে রাখা যাবে।
সাবধানতা : রান্না ও পরিবেশনের সব উপকরণ পরিস্কার রাখতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে। টাটকা খাবার ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশিক্ষণ: ক্যাটারিং ব্যবসা পরিচালনার জন্য এ ব্যবসায় অভিজ্ঞ ব্যক্তির সহকারী হিসেবে কিছুদিন কাজ করলে ব্যবসার বিস্তারিত জানা যাবে এবং ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ হবে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিলে আরও পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থা: ব্রাকঃ http://www.brac.net/, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর www.dyd.gov.bd, বিসিকঃ http://www.bscic.gov.bd/, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর http://www.dwa.gov.bd/, অল্প পুঁজি নিয়ে ক্যাটারিং বা খাদ্য সরবরাহের ব্যবসা যে কেউ শুরু করতে পারেন। বিশেষ করে রান্নার করায় আগ্রহী যে কোনো নারী বা পুরুষ খাদ্য সরবরাহের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

Comments

Popular posts from this blog

ক্যাটারিং ব্যবসা – নারী উদ্যোক্তাদের নতুন পথ

অল্প পুঁজিতে “ক্যাটারিং বা খাদ্য সরবরাহ” এর লাভজনক ব্যবসা!! চেষ্টা করে দেখুন!!!